কাজী নজরূল ইসলাম
    (১৮৯৯-১৯৭৬ খ্রীঃ)
    পারিবারিক সীমাহীন দুঃখ দুর্দশার  মধ্যেও যিনি আজীবন বাংলা কাব্য ও সাহিত্য চর্চায় ব্রতী ছিলেন,যিনি ছিলেন বিস্ময়কর প্রতিভার অধিকারি,যিনি বাংলা কাব্য ও সাহিত্যে প্রচন্ড বিপ্লব ঘটিয়েছেন,যিনি দেশের স্বাধীনতা ও মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্যে জালেম শাসক গোষ্ঠীর আন্যায়ের বিরুদ্বে কলমকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে কারাগারে বন্দী জীবন কাটিয়েছেন,যার কাব্য ও সাহিত্যে ইসলামী ও ঐতিহ্য বলিষ্ঠ ব্যঞ্জনায় মূত হয়ে উঠেছে,যার কবিতা, হামদ, নাত, গজল ও ইসলামী গান প্রায় প্রতিটি বাঙালী মুসলিমের হৃদয়কে করেছে জাগরিত, যিনি ছিলেন একাধারে শ্রমিক..সৈনিক, কবি, সাহিত্যিক, অন্যায়ের বিরুদ্বে প্রতিবাদী এবং একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক তার নাম কাজী নজরুল ইসলাম। বাল্যকালে তার ডাকনাম ছিল দুখু মিয়।

    বাংলা ১৩০৬ সালের ১১ই জৈষ্ঠ মোতাবেক ১৮৯৯ সালের ২৫শে মে বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন।তিনি একাধিক ভ্যাগ্যবান কবির ন্যায় সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্ম গ্রহন করেননি।চুরুলিয়ায় কাজী বংশ একসময় খুবই সম্ভ্রান্ত ছিল বটে; কিন্তু যে সময়ে কবি নজরুল ইসলাম শিশু হয়ে আবির্ভিত হন, সে সময় এ বংশটি ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নানা রকম বঞ্চনা ও শোষনের শিকার হয়ে আভিজাত্যের পশ্চাৎপট থেকে সম্পূর্ণ স্ফলিত হয়ে দৈন্যদশায় একেবারে চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে পড়েছিল।অবর্ণনীয় দুঃখ-কষঠ, লাঞ্ছনা-গঞ্জনা, অপমান এবং মর্মান্তিক দারিদ্রের মধ্য দিয়ে কবির বাল্য, কৈশর ও প্রাক যৌবন কেটেছে।পিতার নাম কাজী ফকির আহমেদ এবং মাতার নাম জাহেদা খাতুন।‘কাজী, হচ্ছে তাঁদের বংশের উপাধি।পিতা ছিলেন স্থানীয় মসজিদের ইমাম এবং মাজারের মুতাওয়াল্লি। ফলে ছোট বেলা থেকেই কাজী নজরুল ইসলাম ইসলামী চিন্তা ও ভাবধারার ভিতর দিয়ে বড় হন।
    বাল্যকালে তিনি বাড়ীর নিকটস্থ মাদ্রাসায় (মক্তব) শিক্ষা জীবন শুরু করেন।মাএ ১০ বছর বয়সে তিনি সুমধুর কন্ঠে কুরআন তেলাওয়াত করতে পারতেন।বাল্যকালেই পবিএ কুরআনের অর্থ ও তার মর্মবাণী শিক্ষা লাভ করতে শুরু করেন।এছারা তিনি বাংলা ও আরবী ভাষা শিক্ষার পাশাপাশি মক্তবে ফার্সী ভাষাও শিখতে থাকেন।হঠাৎ করে তার পিতা মারা যান।তিনি নিতান্তই ইয়াতিম হয়ে পড়েন।সংসারে নেমে আসে অভাব –অনটন ও দুঃখ-দুর্দশা।লেখাপড়া প্রায় বন্ধ হয়ে যায়।এরপর তিনি ‘লেটো, দলের সাথে যোগ দেন এবং খুব কম সময়ের মধ্যেই তিনি সুখ্যাতি অর্জন করেন।‘লেটো, গানের দলে কোন অশ্লিল গান পরিবেশন হতো না বরং বিভিন্ন পালা গান, জারি গান, মুর্শিদী গান ইত্যাদি পরিবেশিত হত।অসামান্য প্রতিভার বলে ‘লেটো, দলের প্রধান নির্বাচিত হন।
    ‘লেটো, গানের দলে থেকেই তিনি বিভিন্ন বইপএ পড়ে সাহিত্য চর্চা চালিয়ে যান।এ সময়ে তিনি কয়েকটি কবিতা, ছড়া গান, পালা গান রচনা করে অসামান্য দক্ষতার পরিচয় দেন।এর পর তিনি শিক্ষা লাভের জন্য গ্রামের কয়েকজন ব্যক্তির সহযোগিতায় রাণীগঞ্জের শিয়ারশোল রাজ স্কুলে ভর্তি হন।
    শৈশব কাল থেকে তিনি ছিলেন একটু চঞ্চল প্রকৃতির। স্কুলের বাধাঁ ধরা নিয়ম কানুন তিনি সহ্য করতে পারতেন না।তাই একদিন হঠাৎ করে স্কুল থেকে উধাও হন তিনি।কিন্তু কোথায় যাবেন, কি খাবেন, কি করে চলবেন ইত্যাদি চিন্তা করে এবং আর্থিক অভাব অনটনের কারণে তিনি আসানসোলের এক রুটির দোকানে মাএ ৫ টাকা মাসিক বেতনে চাকুরী গ্রহণ করেন।রুটি তৈরির ফাঁকে ফাঁকে তিনি বিভিন্ন কবিতা, গান, গজল, পুঁতি ইত্যাদি রচনা করেন এবং বিভিন্ন বইপএ পড়ে তার জ্ঞান ভান্ডারকে সমৃদ্ব করতে লাগলেন।তাঁর প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে জৈনক পুলিশ ইন্সপেক্টর তাঁকে সঙ্গে করে নিয়ে আসেন এবং ময়মনসিংহ জেলার দরিরামপুর হাই স্কুলে ভর্তি করে দেন।এরপর তিনি পুনরায় রানীগঞ্জের শিয়ারসোল রাজ স্কুলে ভর্তি হন।
    ১৯১৭ সালে বিশ্বযুদ্বের সময় তিনি দশম শ্রেণীর ছাএ।যুদ্বের কারনে তাঁর আর প্রাতিষঠানিক লেখাপড়া হল না।তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং ৪৯ নম্বর বাঙালী পল্টন রেজিমেন্টের হাবিলদার পদে প্রমোশন লাভ করেন।সৈনিক জীবনে তাকে চলে যেতে হয় পাকিস্তানের করাচিতে।কিন্তু তাঁর কবিতা ও সাহিত্য চর্চা থেমে থাকেনি।করাচি সেনানিবাসে সহকর্মী একজন পাঞ্জাবী মৌলবী সাহেবের সাথে তাঁর পরিচয় হয়।তার নিকট তিনি ফার্সী ভাষা শিক্ষা লাভ করেন এবং মহাকবি হাফিজ, শেখ সাদী (রঃ) প্রমুখ বিশ্ববিখ্যাত কবিদের রচনাবলী চর্চা করেন।এরপর থেকেই তিনি কবিতা, গল্প. উপন্যাস, হামদনাত, গজল, সাহিত্য ইত্যাদির ব্যাপক রচনার তাগিদ অনুভব করেন।কবি কাজী নজরুল ইসলাম প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভের তেমন কোন সুযোগ না পেলেও অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে তিঁনি তার কাব্য ও সাহিত্য চর্চা চালিয়েছিলেন।যুদ্ব থেমে গেলে ১৯১৯ সালের এপ্রিল মাসে পল্টন রেজিমেন্ট ভেঙে দেয়ার পর তিনি নিজ মাতৃভূমি চুরুলিয়া গ্রামে।এরপর শুরু হয় তার একনিষ্ঠ কাব্য চর্চা।তাঁর লেখা একাধাওে ‘দৈনিক বসুমতি’ ,‘মুসলিম ভারত’ ,‘মাসিক প্রবাসী’ ,‘বিজলী’ ,‘ধুমকেতু’ প্রভৃতি বিভিন্ন পএ পএিকায় ছাপা হতে থাকে।
    নজরুলের কবিতা তদানীন্তন রাজনীতিতে নতুন মাএা যোগ করেছিল।ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামে নিপীরিত, নির্যাতিত, শোষিত ও বঞ্চিত মানুষদের জাগরণের তিনি ছিলেন মহান প্রবক্তা।১৯২১ সালে মাএ ২২ বছর বয়সে তিনি রচনা করেন তাঁর অমর কবিতা ‘বিদ্রোহী’ যা বাংলা সাহিত্যে তাঁকে ‘বিদ্রোহী কবি’ হিসেবে অমর করে রেখেছে।
    বল বীর
    চির উন্নত মম শির
    শির নেহারি নত শির ওই
    শিখর হিমাদ্রির।

    দেশ প্রেমিক কাজী নজরুল ইসলাম ব্রিটিশ শাসক গোষ্ঠীর শোষন ও জুলুমের বিরুদ্বে তাঁর কলমকে অস্ত ও বুলেট হিসেবে ব্যবহার শুরু করেন।ইতিমধ্যে সমগ্র দেশে শুরু হয়েছে ব্রিটিশ বিরোধী তুমুল আন্দোলন।কাজী নজরুল ইসলাম ‘সাপ্তাহিক ধুমকেতু’ প্রএিকায় লিখতে লাগলেন ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্বে।অন্যায়, অবিচার, অসাম্য, ও অসত্যের বিরুদ্বে তিনি লিখনীর মাধ্যমে শুরু করলেন প্রচন্ড বিদ্রোহ।তিনি মুসলিম জাতিকে তাদের অতীতের ঐতিহ্যের কথা স্বরণ করিয়ে শুনিয়েছিলেন জাগরণের বাণী।তিনি স্বদেশবাসীকে আহবান জানিয়েছেন পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙ্গে দেয়ার জন্য।১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে লর্ড কর্ণওয়ালিশের প্রবর্তিত ‘চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত’র মাধ্যমে ব্রিটিশ শাষক গোষ্ঠী এ দেশের বিশেষ করে মুসলমান কৃষকদের ক্রমান্বয়ে নিঃস্ব করে ফেলেছিল।মুসলমান কৃষকেরা তাঁদের জায়গা জমি ও বাড়ী-ঘড় সব কিছু হারিয়ে প্রায় পথে বসেছিল।কবি কাজী নজরুল ইসলাম ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসক চক্রের বিরুদ্বে এ দেশের কৃষক সমাজকে বিদ্রোহ করার আহবান জানান।তিনি ‘সর্বহারা’ কাব্যগন্থের ‘কৃষকের গান’ নামক কবিতায় লিখলেন-
    চল্ চল্ চল্ !
    ঊর্ধ্ব গগণে বাজে মাদল,
    নিম্নে উতলা ধরণী-তল,
    অরুণ প্রাতের তরুন দল।
    চল্ চল্ চল॥

    বর্তমানে বাংলাদেশ সরকার এ কবিতাটিকে রণসঙ্গীতের মর্যাদা দান করেছেন।পরাধীনতার শৃঙ্খলামুক্ত জাতির জীবনে অন্যায়, অত্যাচার ও অবিচার নির্মূল করার ব্যাপারে তাঁর আবেদন চির অম্লান।
    কবি কাজী নজরুল ইসলাম বহু হাম্দ, নাত, গজল, আধুনিক গান, ইসলামি গান, গল্প, কবিতা, সাহিত্য ও উপন্যাস রচনা করে যান।এ সকল বিষয়ে তাঁর রচনার সংখা কয়েক সহস্র।তাঁর রচনাবলীর মধ্যে অগ্নিবীণা, বিষের বাঁশী, দোলন চাঁপা চক্রান্ত, প্রলয় শিখা, ভাঙার গান, নতুন চাঁদ, ফনীমনসা, রিক্তের বেদন, মৃত্যুক্ষুধা, সাম্যবাদী, সর্বহারা, সিন্দু হিন্দোল, রাজবন্দীর জীবনবন্দী প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।বাংলাদেশে ‘নজরুল ইনস্টিটিউট’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান তাঁর লেখার উপর গবেষনা চালিয়ে যাচ্ছে।তিনি ফরাসী ভাষার মহাকবি হাফিজের কতগুলো কবিতার বাংলা অনুবাদ করেছেন।কবি কাজী নজরুল ইসলামের অধিকাংশ কবিতা ও সাহিত্য রুশ ভাষাতে অনুদিত হয়েছে।ইংরেজি ভাষায়ও তাঁর লেখার অনুবাদ হয়েছে এবং হচ্ছে।১৯৪৫ সালে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কবি জগওারিণী পুরুষ্কার প্রাপ্ত হন।১৯৬০ সালে তিনি ভারত সরকার কর্তৃক পদ্মভুষন উপাধিতে ভূষিত হন।১৯৭০ সালে বিশ্ব ভারতী কবিকে ‘ডিলিট’ উপাধি দিয়ে সম্মানিত করেন।১৯৭৩ সালে কবি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও ‘ডিলিট’ উপাধি লাভ করেন।১৯৭৫ সালে কবিকে ‘একুশে পদক’ প্রদান করা হয়।
    আধুনিক বাংলা কাব্য ও সাহিত্যে মুসলিম সাধনার সবচেয়ে বড় প্রেরণা হলেন কবি কাজী নজরুল ইসলাম।তাঁর আবির্ভাবে মুসলিম স্বাতন্ত কাব্য সাধনার দিগন্তে নবোদিত সূর্যের মহিমা বিচ্ছুরিত হয়েছে।ইসলামি বিভিন্ন বিষয়গুলোকে তিনিই প্রথমবার সত্যিকার সাহিত্যে রূপ দিয়েছিলেন।কাজী নজরুল ইসলাম ছাড়াও প্রবীনদের মধ্যে মীর মোশাররফ হোসেন, মহাকবি কায়কোবাদ, কবি গোলাম মোস্তফা, ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ এবং নবীনদের মধ্যে কবি ফররুখ আহমেদ, সৈয়দ আলী আহসান তামিল হোসেন, কাদির নেওয়াজ প্রমুখ কবিগণ মুসলিম স্বাতন্তবোধের বাণী উচ্চারন করেছিলেন।কিন্তু সে বাণী নজরুল ইসলামের ন্যায় বজ্রকন্ঠ ছিল না, ছিল অর্ধোচ্চারিত।নজরুল কাব্যে ইসলামী ও মুসলিম ঐতিহ্য বলিষ্ঠ ব্যঞ্জনায় মূর্ত হয়ে উঠেছে।নজরুল ছিলেন মুসলিম পুনর্জাগরণের কবি এবং স্বাধীনতা চেতনার প্রতীক। বাংলা ভাষায় আরবী, ফার্সী শব্দের সার্থক ব্যবহার, ইসলামী আদর্শ এবং মুসলিম ঐতিহ্যের রূপায়নে নজরুল ইসলামের অবদান অবিস্মরণীয়।
    তিনি ‘খেয়াপারের তরণী’ কবিতায় লিখেছেন-
    ‘আবু বকর, উসমান, উমর আলী হায়দার,
    দাঁড়ী যে এ তরণীর, নাই ওরে নাই ডর।
    কান্ডারী এ তরীর পাকা মাঝি মাল্লা,
    দাঁড়ী মুখে সারী গান-লা শরীক আল্লাহ।

    কারবালার মর্মান্তিক বিয়োগান্ত ঘটনা কবি নজরুল ইসলাম কি সুন্দর ভাবে তাঁর কাব্যে ফুটিয়ে তুলেছেন-
    ‘নীল সিয়া আসমান লাল লাল দুনিয়া।
    আম্মা! লাল তেরি খুনকিয়া খনিয়া
    কাঁদে কোন্ ক্রন্দসী কারবালা ফোরাতে
    সে কাঁদনে আসু আনে সীমারের ছোরাতে।

    ইসলামী আদর্শ ও মুসলিম জাতির স্বরূপ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি লিখেছেন-
    ‘ধর্মের পথে শহীদ যাহারা, আমরা সেই সে জাতি।
    সাম্য মৈএী এনেছি আমরা বিশ্বে করেছি জ্ঞাতি।
    আমরা সেই জাতি।

    কাজী নজরুল ইসলামের আল্লাহর প্রতি ছিল অগাধ ভক্তি ও বিশ্বাস।মানুষের প্রতি আল্লাহ পাকের অশেষ নেয়ামতের শুকরিয়া জ্ঞাপন করে তিনি লিখেছেন-
    এই সুন্দর ফুল সুন্দর ফল মিঠা নদীর পানি
    খোদা তোমার মেহের বাণী।
    এই শস্য-শ্যামল ফসল ভরা মাটের ডালি খানি
    খোদা তোমার মেহের বাণ॥
    তুমি কতই দিলে মানিক রতন, ভাই বেরাদর পুএ স্বজন
    ক্ষুধা পেলে অন্ন জোগাও মানি চাই না মানি
    খোদা তোমার মেহের বাণী।

    তিনি ইসলামের মৌলিক ইবাদত ও বিধানকেও বাংলা কাব্যে যথাযথভাবে প্রয়োগ করেছেন। তিনি লিখেছেন-
    ‘মসজিদে ঐ শোন ওে আযান, চল্ নামাযে চল্,
    দুঃখে পাবি সান্ত্বনা তুই বক্ষে পাবি বল।
    ওÍ চল্ নামাযে চল্।
    ...........................
    ..........................
    “তুই হাজার কাজের অছিলাতে নামায করিস কাজা,
    খাজনা তারি দিলিনা, যে দিন দুনিয়ার রাজা।
    তারে পাঁচ বার তুই করবি মনে, তাতেও এত ছল
    ওর চল, নামাযে চল॥”
    এমনিভাবে কবি নজরুল ইসলাম তাঁর কাব্যে মুসলিম স্বাতন্তবোধ সৃষ্টি করেছেন। তাঁর প্রতিটি ইসলামী গান, গজল, হামদ ও নাত প্রায় প্রত্যেক বাঙালী মুসলমানের মুখে মুখে উচ্চারিত হচ্ছে এবং বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান, ওয়াজ মাহফিল ও মিলাদ মাহফিলে তাঁর লেখা হামদ, নাত, গজল পঠিত হচ্ছে।
    ১৯৪২ সালে কবি কাজী নজরুল ইসলাম এক দূরূহ ব্যধিতে আক্রান্ত হন এবং বাকশক্তি চিরদিনের জন্য হারিয়ে ফেলেন।তাঁকে সুস্থ করে তোলার জন্য দেশের সকল প্রকার চিকিৎসা ব্যর্থ হবার পর ১৯৫৩ সালে সুচিকিৎসার জন্যে সরকারি ব্যবস্থাধীনে লন্ডনে পাঠানো হয়।কিন্তু সেখানেও কবিকে রোগমুক্ত করা সম্ভব হয়নি।
    তারপর ১৯৭২ সালে তাঁকে বিদেশ থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় নিয়ে আসা হয় এবং ঢাকার পিজি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর বাংলা ১৩৮৩ সালের ১২ই ভাদ্র মোতাবেক ১৯৭৬ইং সালের ২৯শে আগস্ট এ বিখ্যাত মনীষী পিজি হাসপাতালে মৃত্যুবরন করেন।তিনি তার একটি ইসলামি সংগীতে অছিয়ত কওে যান, তাঁকে মসজিদের পার্শ্বে কবর দেয়ার জন্য; যেন তিনি কবরে শুয়েও মুয়াজ্জিনের সুমধুর আযানের ধ্বনি শুনতে পান। তিনি লিখেছেন-
    মসজিদেরই পাশে আমায় কবর দিও ভাই।
    যেন গোরে থেকেও মুয়াজ্জিনের আযান শুনতে পাই।
    ............................
    ............................
    আমার গোরের পাশ দিয়ে ভাই নামাযীরা যাবে,
    পবিএ সেই পাযের ধ্বনি এ বান্দা শুনতে পাবে।
    গোর-আযাব থেকে এ গুণাহ্গার পাইবে রেহাই।
                            
    তাঁর সে অছিয়ত অনুযায়ীই ঢাকা বিশ্ববিদ্বালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন উওর পার্শ্বে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় কবিকে সমাহিত করা হয়। মসজিদের পার্শ্বে কবি আজ চির নিদ্রায় শায়িত।প্রতিদিন প্রায় অসংখ্য মানুষ নামাজান্তে কবির মাজার জিয়ারত করছে। আজ কবি পৃথিবীতে নেই; কিন্তু বাংলা কাব্যে কবি ইসলামী ভাবধারা ও মুসলিম স্বাতন্তবোধ সৃষ্টিতে যে অবদান রেখে গেছেন, প্রতিটি শিক্ষিত বাঙালী মুসলমানের হৃদয়ে কবি অমর হয়ে থাকবেন।